শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ০৪:১৬ অপরাহ্ন

পাওনা বঞ্চিত নারায়ণগঞ্জ – ফরিদ আহমেদ রবি

দেশজুড়ে সংবাদ ডেস্ক / ১৫২ বার পঠিত
প্রকাশিত সময় : শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ০৪:১৬ অপরাহ্ন

পাওনা বঞ্চিত নারায়ণগঞ্জ!
ফরিদ আহমেদ রবি
মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬ শে মার্চ ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রুটে ৮ জোড়া নতুন কমিউটার ট্রেনের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়েছে।নিয়মিত ঢাকা যাতায়াতকারী যাত্রীদের জন্য এটি অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ।যে কোন প্রাপ্তিই আনন্দের তবে হারিয়ে যাওয়া কিছু ফেরত পেলে আনন্দের মাত্রা কিছুটা ভিন্নতা পায়।এক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ বাসীর হয়েছে সেই দশা! এক সময়ের প্রধান এবং বৃহত্তম রেল স্টেশনটি পর্যায়ক্রমে আঞ্চলিক স্টেশনে পরিনত হয়, চাহিদা থাকা স্বত্বেও গোষ্ঠী স্বার্থে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী ট্রেনের সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়। দীর্ঘদিন প্রতীক্ষার পর হারিয়ে যাওয়া অধিকারের কিঞ্চিত ফিরে পাওয়ায় সত্যিই আনন্দিত নারায়ণগঞ্জ বাসী।একইভাবে হারিয়ে যাওয়া বা প্রাপ্য অনেক অধিকার যদি নারায়ণগঞ্জ বাসীর ভাগ্যে জুটতো তাহলে কতই না ভাল হতো!
জাতীয় অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ অবদান রাখা শিল্প ও বাণিজ্য সমৃদ্ধ বন্দর নগরী নারায়ণগঞ্জ।দেশের সবচেয়ে ছোট জেলা হলেও সর্বোচ্চ সংখ্যক লোকের বসবাস জেলাটিতে।প্রধান নৌ বন্দর সহ দেশের লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় অংশ, পদ্মা সেতুমুখী রেলপথের একাংশ নারায়ণগঞ্জে অবস্হিত। দেশের জন্য নানা ভাবে ভূমিকা রাখা অঞ্চলটি প্রাচীনকাল থেকেই দেশ ও জাতির কল্যাণে অবদান রেখে চলেছে। দেশের সবচেয়ে ধনী জেলার তকমা ধারী নারায়ণগঞ্জ সব দিক থেকেই এগিয়ে আছে এমন ধারণা করাই স্বাভাবিক। যাঁরা নারায়ণগঞ্জে বসবাস করেন না নারায়ণগঞ্জের সাথে কোনরকম প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা নেই তাদের অনেকেই ধরে নেন এখানে বসবাসরত সবাই নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।এমন ধারণা স্বাভাবিক মনে হলেও বাস্তব অবস্থা তার ঠিক উল্টোটি! এখানে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজন সর্বনিম্ন নাগরিক সুবিধা এবং ন্যায্য পাওনা থেকেও বঞ্চিত। এদের সিংহভাগ দরিদ্র শ্রেণীর এবং বহিরাগত। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন,নগরায়ন, জনসংখ্যার আধিক্য নারায়ণগঞ্জকে বসবাসের প্রায় অযোগ্য করে তুলেছে। দীর্ঘকাল যাবত দাবি করে আসলেও নারায়ণগঞ্জবাসীর ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা আজও নিশ্চিত করা হয় নি। সরকার আসে সরকার যায়, নারায়ণগঞ্জ বাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন আর ঘটে না। শিল্প বাণিজ্যের প্রয়োজনে গড়ে ওঠা আদি কালের অবকাঠামো নিয়ে আজও কোনরকম ধুঁকে ধুঁকে চলছে নারায়ণগঞ্জ বাসীর জীবন।কি এক অদ্ভুত কারণে ক্ষমতাসীন প্রতিটি দলেরই চোখের কাঁটা হয়ে ওঠে নারায়ণগঞ্জ।এক সরকারের গৃহীত প্রকল্প আরেক সরকার এসে অবলীলায় বন্ধ করে দেয়।দেশ শাসনকারী প্রতিটি দলের শক্ত অবস্থান রয়েছে নারায়ণগঞ্জে।একদল ক্ষমতায় থাকলে অন্যদলের বিরোধী ভূমিকা এখানে বেশ প্রকটভাবে দেখা যায়।ক্ষমতাসীন যেকোনো দলের বিপক্ষে নারায়ণগঞ্জ সবসময়ই সোচ্চার থাকে বলে হয়তো রাজনৈতিক প্যাঁচে পড়ে নারায়ণগঞ্জের এমন অবস্থা বলে অনেকের আশংকা।নারায়ণগঞ্জ বাসীর ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার কাজ কখনই আলোর মুখ দেখে না। সরকারের উদাসীনতা এবং নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এর প্রধান কারণ বলেও অনেকে মনে করেন।স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অন্তঃকলহের কারণে নারায়ণগঞ্জের প্রকৃত চিত্র সরকারের সর্বোচ্চ মহলে ঠিকমত পৌঁছেনা বলেও অনেকের ধারণা।এমনটি হয়ে থাকলে তা সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেই চিহ্নিত হওয়ার কথা কারণ নীতি নির্ধারক মহলের একথা অজানা থাকার কথা নয় নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রকৃত চাহিদা কি? জাতীয় স্বার্থেই নারায়ণগঞ্জবাসীকে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা প্রদান সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব বলে সকলের বিশ্বাস। নারায়ণগঞ্জ বাসীর স্বার্থে তেমন কোন উন্নয়নমূলক কাজ আজও আলোর মুখ দেখেনি। শিল্প, বাণিজ্য, যোগাযোগ খাতে যে সমস্ত উন্নয়ন কাজ হয়েছে তা নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বার্থে নয় বরং জাতীয় স্বার্থে।কদম রসুল সেতু এবং ডাবল ডুয়েল গেজ রেল লাইন প্রকল্প মূলত নারায়ণগঞ্জের স্বার্থে গৃহীত হলেও সেখানে জাতীয় স্বার্থও জড়িত। এ দুটি প্রকল্প ঝুলে আছে দীর্ঘ দিন যাবত। প্রকল্প দুটো আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা তেমন সন্দেহ সমগ্র নারায়ণগঞ্জবাসীর।এসব উন্নয়ন কাজ সহ নারায়ণগঞ্জের কল্যাণার্থে কোন কাজই না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে যদি ধরে নেয়া যায় তাহলে বর্তমান সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জ বাসী আশা করতেই পারে তাদের জন্য সুদিন অপেক্ষা করছে!কারণ দেশের বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক।কোন উন্নয়ন কাজ করে বা বন্ধ করে রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করার কোন ইচ্ছা এ সরকারের নেই বলেই সাধারণ মানুষের বিশ্বাস।এমন অবস্থায় নারায়ণগঞ্জের জন্য করণীয় যাবতীয় উন্নয়নকর্ম এ সরকার করবেন বলেই নারায়ণগঞ্জ বাসী আশা করে। যদি তা না হয় তাহলে রাজনৈতিক সরকারের সাথে পার্থক্য থাকলো কোথায়? জাতীয় স্বার্থে নারায়ণগঞ্জ সুদীর্ঘ কাল শুধু দিয়েই আসছে,প্রাপ্তির খাতায় শুধু শূন্য।অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা কেড়ে নেয়া হয়েছে। এমন আঙ্গিকে চিন্তা করলে একথা বলা অন্যায় হবে না “সারা দেশ ও জাতি নারায়ণগঞ্জের কাছে ঋণী”।ঋণ পরিশোধের প্রত্যাশা না থাকলেও নারায়ণগঞ্জের ন্যায্য পাওনা আদায় হোক এ প্রত্যাশা থাকা নিশ্চই অন্যায় নয়।দেশকে অনেক কিছু দেয়া নারায়ণগঞ্জবাসীর মৌলিক চাহিদা সমূহ পূরণ করার এখনই সময়।নয়তো পরবর্তী কালে আবারও সেই আদি ও অকৃত্রিম রাজনৈতিক গ্যাঁড়াকলে পড়ে সব রকম উন্নয়ন কাজ হয় বন্ধ হয়ে যাবে নয়তো ফাইল বন্দী হয়ে চির নিদ্রায় চলে যাবে। নারায়ণগঞ্জ বাসীর ন্যায্য চাহিদা সমূহ পূরণে বর্তমান সরকার এগিয়ে আসবেন তেমনটিই সবার প্রত্যাশা।প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হলে বর্তমান সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের কাছে চির ঋণী হয়ে থাকবে দীর্ঘ বঞ্চনার শিকার নারায়ণগঞ্জ বাসী।
লেখক: বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি ও পোশাক শিল্পের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...


এ ক্যাটাগরীর আরো খবর..