শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ১০:৪৫ অপরাহ্ন

বিক্রয়োত্তর সেবার নামে প্রতারণা- ফরিদ আহমেদ রবি

দেশজুড়ে সংবাদ ডেস্ক / ৩৩ বার পঠিত
প্রকাশিত সময় : শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ১০:৪৫ অপরাহ্ন
{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":["local"],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"square_fit":1,"transform":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}

বিক্রয়োত্তর সেবার নামে প্রতারণা
ফরিদ আহমেদ রবি
দেশে ইলেকট্রনিক সামগ্রী প্রস্তুত এবং বাজারজাত করছে এমন প্রতিষ্ঠান দিন দিন বেড়েই চলেছে।এর মধ্যে সম্পূর্ণ দেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। শ্রেণীভেদে কারও গ্রাহক সংখ্যা কম নয়। দেশে পন্য উৎপাদন বা সংযোজনকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই পন্যের ওয়ারেন্টি এবং বিক্রয়োত্তর সেবার নিষ্চয়তা দিয়ে থাকে। ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও গ্রাহক সেবা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি থাকে নির্ধারিত সার্ভিস চার্জ এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের বাজারমূল্য পরিশোধের শর্তে। নির্ধারিত চার্জ প্রদান করে ঘরে বসেও এ সেবা নেয়া যায়।এমন সেবা প্রাপ্তির লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ শহরস্হ অসংখ্য গ্রাহক যে ধোঁকার শিকার হচ্ছে তা ব্যবসার কোন মানদন্ডেই পড়ে না। দেশের অন্য কোথাও এমন ধোঁকাবাজি হয় কি না জানা নেই। তবে দু এক জায়গায় একই প্রতিষ্ঠানের উন্নত সেবা প্রদানের উদাহরণ দেখা যাওয়ায় প্রশ্ন জাগে একই প্রতিষ্ঠানের সেবার মান নারায়ণগঞ্জে ভিন্ন হওয়ার কারণ কি?
এমন এক তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন প্রতিবেদক নিজেই।স্বনামধন্য একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের নারায়ণগঞ্জস্হ শোরুম থেকে ক্রয় করা এলইডি টিভির পর্দয় ছবি আসছে না তবে আওয়াজ ঠিক আছে। ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ।একজন অভিজ্ঞ মেকারের পরামর্শে পর্দায় আলো ফেলে অস্পস্ট ছবির উপস্থিতি লক্ষ্য করে নিশ্চিত হওয়া গেল অল্প দামের ব্যাকলাইট নষ্ট হয়েছে,যার বাজারমূল্য ৫০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। সার্ভিস চার্জসহ প্রতিস্হাপন খরচ আরও কিছু বাড়বে। সম্ভাব্য উন্নত সেবা পাওয়ার লক্ষ্যে কোম্পানির হোম সার্ভিসের সাথে যোগাযোগ করা হলে বাড়িতে এসে নির্ধারিত চার্জের বিনিময়ে একজন মেকার টিভি দেখে বলে গেল বিস্তারিত অফিস থেকে জানানো হবে।তিনদিন পর কোম্পানির নির্ধারিত নাম্বার বহির্ভূত একটি মোবাইল থেকে ফোন করে জানানো হয় টিভির প্যানেল নষ্ট হয়ে গেছে,প্রতিস্হাপন করতে হবে, খরচ হবে ২৪২৫০.০০ টাকা। যদিও প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ ইমেইল অথবা পূর্বে ব্যবহৃত নাম্বার থেকে এসএমএস মারফত জানানোর কথা। ফোনে যোগাযোগকারী ব্যক্তিকে যখন জানানো হলো যে টিভির ব্যাকলাইট নষ্ট হয়েছে যার দাম সর্বোচ্চ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা সেখানে এত টাকা বেশি দিয়ে কেন টিভি ঠিক করাতে হবে?এই টাকায়তো নতুন টিভি কেনা যায়!উত্তরে ভদ্রলোক জানালেন তারা ছোটখাটো যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন বা রিপেয়ার কাজ করে না,পুরো প্যানেল বা ডিসপ্লে বদলে দিতে পারে।ভদ্রলোক এও জিজ্ঞেস করলেন কিভাবে নিশ্চিত হওয়া গেল যে টিভির ব্যাকলাইট নষ্ট হয়েছে? বিস্তারিত জানানোর পর ভদ্রলোক আমতা আমতা করতে থাকে। তাকে জানানো হলো যে অফিশিয়ালি মেইল অথবা এসএমএস মারফত যেন সবকিছু জানানো হয়। তারপর আর কোন সাড়াশব্দ নেই! মূল প্রতিষ্ঠানের সেবা পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে স্থানীয় এক মেকারের মাধ্যমে ব্যাকলাইট প্রতিস্থাপন করে টিভি আবার সচল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে ৩ হাজার টাকা।
উল্লেখিত ঘটনা প্রমাণ করে কোম্পানি কর্তৃক ঘোষিত বিক্রয়োত্তর সেবা বা হোম সার্ভিস ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কিছুই নয়। বরং গ্রাহকের পকেট কাটার একটি অভিনব কৌশল মাত্র। একটি কমদামী যন্ত্রাংশের পরিবর্তে দশ গুণ মূল্যের প্যানেল লাগাতে বলা শঠতা ছাড়া আর কিছু নয়।ইলেকট্রনিক সামগ্রী সম্পর্কে সাধারণ মানুষের তেমন ধারণা থাকার কথা নয়,তারা সরল বিশ্বাসে কোম্পানির দ্বারস্হ হয়ে অজান্তেই প্রতারনার শিকার হচ্ছে।এক্ষেত্রে মূল প্রতিষ্ঠানের দায় কতটুকু তাও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় কারণ দ্বিতীয় ধাপে যোগাযোগ করা হয়েছে ভিন্ন নাম্বার ব্যবহার করে।যদি কোম্পানির অজান্তে এমনটি হয়ে থাকে তার দায়ও কোম্পানিকেই নিতে হবে।কারণ সেবাপ্রার্থী গ্রাহকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা তাদের দায়িত্ব। কোম্পানির প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা না থাকলে পরোক্ষ প্রশ্রয় বা দায়িত্বহীনতার কারণে স্হানীয় পর্যায়ে কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি সিন্ডিকেট গঠন করে গ্রাহকসেবার নামে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে। ঘটনা যেভাবেই ঘটুক কোম্পানি তার দায় এড়াতে পারবে না।সংগত কারণেই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা তাদেরকেই নিতে হবে।এমন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এক ভদ্রলোক জানালেন তাঁর সাথে এমনটিই হয়েছে তবে এক পর্যায়ে কিছু কম খরচে টিভি ঠিক করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয় এবং তিনি তা গ্রহণ করেন। তবে মেরামত বা যন্ত্রাংশ বাবদ গৃহীত টাকার কোন রশিদ তাঁকে দেয়া হয় নি।কোম্পানির নীতিমালাতে যদি এমন প্রক্রিয়ার বৈধতা থাকে তাও অনিয়ম দূর্নীতি ছাড়া আর কিছুই নয়।এমন অনিয়ম সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য অশনিসংকেত।যারা প্রকৃত অর্থেই গ্রাহকসেবা প্রদান করছে তারাও ক্ষতিগ্রস্হ হবে অসাধু কিছু ব্যবসায়ীর এমন অব্যবসায়ীসূলভ আচরণে।অনিয়ম নির্মূল করা শুধুমাত্র গ্রাহকদের জন্যই নয় বরং মূল প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও অতীব প্রয়োজন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানের কঠোর নজরদারি এমন অব্যবস্থাপনা রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে বলে সচেতন মহলের অভিমত। এমন অনিয়ম যদি শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জের বেলায় হয়ে থাকে তাহলে মূল প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের উচিত তা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।গ্রাহকসেবার যুগোপযোগী কার্যকর নীতিমালা থাকলে তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে,না থাকলে গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তা অবশ্যই প্রনয়ণ এবং কার্যকর করতে হবে।নয়তো গ্রাহক তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত, প্রতারিত হতেই থাকবে, পাশাপাশি গ্রাহক ঠকিয়ে অসাধু কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার অব্যাহত রাখবে, যার কোনটিই কাম্য নয়।
লেখক: বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি ও পোশাক শিল্পের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...


এ ক্যাটাগরীর আরো খবর..