শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ০৪:৪২ অপরাহ্ন

রেলপথে অশনিসংকেত- ফরিদ আহমেদ রবি

দেশজুড়ে সংবাদ ডেস্ক / ১৬৩ বার পঠিত
প্রকাশিত সময় : শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ০৪:৪২ অপরাহ্ন

রেলপথে অশনিসংকেত!
ফরিদ আহমেদ রবি
“রেলপথে আশার আলো” শিরোনামে একটি লেখা গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়েছিল।সে সময় রেলওয়ের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নারায়ণগঞ্জ পরিদর্শন এবং রেলওয়ের থেমে থাকা কিছু প্রকল্প শুরু করার আশ্বাস বাণীর প্রেক্ষিতে এমন লেখার অবকাশ।থেমে থাকা প্রকল্প সমূহের অন্যতম চাষাঢ়া নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের জন্য নতুন করে কার্যাদেশ দিয়ে কাজ শুরু এবং ছয় মাসের মধ্যেই তা দৃশ্যমান হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন রেলওয়ের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ।আগের কার্যাদেশপ্রাপ্ত চায়না কোম্পানি কাজটি সম্পন্ন করতে পারেনি অনভিজ্ঞতার কারণে তাও জানানো হয়।লেখাটিতে আশংকা প্রকাশ করা হয় দীর্ঘদিন নানা অজুহাতে থেমে থাকা প্রকল্পটি আদৌ আলোর মুখ দেখবে, না কি আগের মত শুধু আশ্বাস বাণীতেই সীমাবদ্ধ থাকবে? সাত মাস পরও কাজ দৃশ্যমান হওয়া দূরে থাক কার্যাদেশ সম্পর্কে কোন সংবাদ না থাকায় আশংকার কথাই আবার সামনে চলে এলো।এর আগে অসংখ্য বার আশ্বাসবাণী স্বত্বেও কি এক অদৃশ্য কারণে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রেলপথের উন্নয়ন, সংষ্কার,কিছুই হয়নি।এক সময়ের প্রধান স্টেশনটি আরও বেশি কার্যকর করার অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে প্রায় অকার্যকর করে রাখা হয়েছে।নদী বন্দর এবং সড়ক সংযোগ সংলগ্ন হওয়ায় এখান থেকে শুধু যাত্রীবাহী নয় পান্যবাহী ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনলে জাতীয় অর্থনীতিতে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত। এমন আশাবাদ শুনে অনেকেই বলবেন রমরমা পাট ব্যবসার সময় এমন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল এখন সে সুযোগ নেই।ভুলে গেলে চলবেনা দেশের সর্বোচ্চ রফতানি পান্য নীট গার্মেন্টসের সিংহভাগই এখানে উৎপাদিত হয় এবং বিভিন্ন পথে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে দিতে হয়। রেলপথে কন্টেইনার সার্ভিস চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরে সরাসরি পণ্য পাঠানোর সুযোগ উন্মোচিত হবে। গার্মেন্টস মালিকগণ এমন সুযোগ হাতছাড়া করবেন না, বরং সানন্দ চিত্তে গ্রহণ করবেন।পাশেই খানপুর নৌ কনটেইনার পোর্ট আধুনিকায়নের কাজ চলছে, এসব কনটেইনার রেলপথে পরিবহনের সুযোগ থাকলে তাও হবে ব্যবসাবান্ধব।বিশাল ভূসম্পত্তি সম্বলিত স্টেশনটিতে কমলাপুরের আদলে তেমন কনটেইনার ডিপো করাও সম্ভব। যুগোপযোগী পরিকল্পনার মাধ্যমে যখন কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিকভাবে আরও লাভবান হওয়ার কথা তখন স্টেশনটির অনেক সম্পদ বেদখল হচ্ছে,অনেক সম্পদ বিনা ব্যবহারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।কেউ কেউ বলেন সড়কপথের মাফিয়াএবং স্টেশনের সম্পদ লুণ্ঠনের সাথে জড়িত চক্রের সাথে আঁতাত করে একশ্রেণীর অসাধু প্রশাসনিক এবং রেল কর্মকর্তা এমন অবস্থা তৈরি করে রেখেছেন।এতে হাতে গোনা কিছু ব্যক্তি লাভবান হলেও নারায়ণগঞ্জবাসীর কষ্ট দীর্ঘায়িত হচ্ছে, দেশ হারাচ্ছে রাজস্ব আয়।ভাবতে অবাক লাগে এই সেদিনও দেশের অন্যতম প্রধান রেলস্টেশন ছিল এটি। ব্রিটিশ আমলে নারায়ণগঞ্জ থেকে দেশের সব প্রান্তে যাত্রী ও পন্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয় যা স্বাধীনতা পরবর্তী সময় পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল।কেন যে তা বন্ধ হয়ে গেল তাও এক রহস্য!রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। অরাজনৈতিক সরকারের আমলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাস কিছুটা আশার আলো জাগিয়ে নিভু নিভু পর্যায়ে চলে গেছে। প্রকল্পের কাজ শুরু না হতেই কোন কোন মহল স্টেশনটি বন্ধ করে চাষাঢ়ায় স্হানান্তরের দাবি জানিয়েছেন। শহরের মধ্যে বেশকটি লেভেল ক্রসিংয়ের জন্য সৃষ্ট যানজটের কারনেই এমন দাবি উঠেছে। লেভেল ক্রসিং অবশ্যই যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ। উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে লেভেল ক্রসিং এড়ানোর অনেক পন্হা রয়েছে।উড়ন্ত বা ভূগর্ভস্থ রেল বা সড়কপথ নির্মানের মাধ্যমে অনায়াসে যানজট এড়ানো সম্ভব। ঢাকা সহ দেশের অনেক জায়গায় এমন অবকাঠামো ইতিমধ্যেই নির্মিত হয়েছে। জাতীয় অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ অবদান রাখা জেলা নারায়ণগঞ্জের ক্ষেত্রে তেমন পরিকল্পনার কথা কেন ভাবা হচ্ছে না? যানজটের ভয়ে দেশের প্রাচীনতম স্টেশন সমুহের অন্যতম স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা কি ভাবে করা হয়? সারা দেশে সড়ক নৌ এবং রেলপথের এমন সমাহার আর কোথায় আছে?এই সুযোগ কাজে লাগানোর পরিবর্তে ভিন্ন চিন্তা কিভাবে করা হয়? এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।যানজট মুক্ত শহর নারায়ণগঞ্জ বাসীর প্রাণের দাবি।মেট্রোরেলের যুগে লেভেল ক্রসিং মুক্ত রেলপথ নির্মাণ খুব জটিল বিষয় নয়।নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রিক রেল যোগাযোগ আধুনিকায়নে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি প্রধান স্টেশন স্হানান্তরের দাবি নারায়ণগঞ্জ বাসীর জন্যে অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দিয়েছে।রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাস বাণীতে যখন আধুনিক রেল যোগাযোগ সহ হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার আনন্দে উদ্বেল থাকার কথা তখন এমন আশংকা কোন ভাবেই কাম্য নয়।দেশে এতসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে পারে শুধু নারায়ণগঞ্জের বেলায় তার ঠিক উল্টোটি কেন হবে? আগে রাজনৈতিক কারণের কথা বলা হয়েছে, এখনতো সে বালাই নেই!এখন কেন কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না? এসব প্রশ্নে নারায়ণগঞ্জবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নীতিনির্ধারক মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করতে হবে। বিভক্তি থাকলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কখনই গতি পাবে না।বরং স্বার্থান্বেষী মহল বিভক্তির সুযোগ নিয়ে বরাবরের মত নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন থামিয়ে রাখবে। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ আন্তরিক হলে একদা রেলশহর খ্যাত নারায়ণগঞ্জ ফিরে পাবে হারানো ঐতিহ্য, সংরক্ষিত হবে জাতীয় স্বার্থ।তেমন দিন কবে আসবে?আদৌ আসবে কি?না কি শুধু আশ্বাস বাণীতেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এমন সব প্রশ্নের উত্তর জানতে উদগ্রীব হয়ে প্রহর গুনছে নারায়ণগঞ্জ বাসী।
লেখক: বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি ও পোশাক শিল্পের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...


এ ক্যাটাগরীর আরো খবর..