শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ১১:২২ অপরাহ্ন

মাদকের ভয়াল থাবায় নারায়ণগঞ্জ – ফরিদ আহমেদ রবি

দেশজুড়ে সংবাদ ডেস্ক / ১৪৫ বার পঠিত
প্রকাশিত সময় : শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ১১:২২ অপরাহ্ন

মাদকের ভয়াল থাবায় নারায়ণগঞ্জ
ফরিদ আহমেদ রবি
“নারায়ণগঞ্জে ইয়াবা সহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক”।১০ মে একটি পত্রিকার শিরোনাম।এমন কোন দিন নেই মাদক ব্যবসায়ী আটকের সংবাদ গণমাধ্যমে আসেনা। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রান্তে মাদক সংক্রান্ত সণ্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও প্রায় প্রতিদিনের সংবাদ হয়ে দাড়িয়েছে।মাদকের ভয়াল থাবায় সারাদেশই আক্রান্ত। তবে নারায়ণগঞ্জ যেন মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, এখন আর গোপনীয় কোন বিষয় নয়, সবটাই প্রকাশ্যে চলে এসেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাদক পৌঁছে দেয়ার নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে মাদক ব্যবসায়ী আটকের সংবাদ তেমনটিই নির্দেশ করে।মাদক আটকের পরিমান সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলেও অধরা মাদকের পরিমাণ অজানাই থেকে যায়। তবে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় তার পরিমাণ অবশ্যই অনেক গুণ বেশি।কারণ দুচারজন ধরা পড়লেও বাকীগুলো ঠিক ঠিক গন্তব্যে পৌঁছে যায়।বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় মাদক ব্যবসা এবং মাদকসেবীর ক্রমবর্ধমান বিস্তৃতি তাই প্রমান করে।নারায়ণগঞ্জে মাদকের ভয়াবহতা আগে ছিল না বিষয়টি এমন নয়।মাদকের সাথে তথাকথিত গডফাদার এবং পুলিশের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অনেক অভিযোগ ছিল। বর্তমান সরকারের আমলে তেমন অভিযোগ আসার কথা নয়, কারণ ইমেজ সংকটে থাকা পুলিশ বাহিনী এখনও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া গডফাদারের অস্তিত্ব থাকার কথা নয়, তাহলে দিন দিন মাদকের বিস্তৃতি কোন অপশক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে চলেছে।সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে নেই তো? এমন প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রতিটি মানুষের নধ্যেই! পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাদের বড় একটা অংশ মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করতো তা প্রমানিত হয়েছে সরকার পরিবর্তনের পর।পূর্ববর্তী সরকারের আজ্ঞাবহ সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করার কথিত অভিযোগে জনরোষের শিকার হয়ে কার্যত নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে পুলিশ।বহু পুলিশ সদস্য হতাহত হয়,অনেকে পরিচয় লুকিয়ে আত্নগোপনে যেতে বাধ্য হয়। পুলিশের এই সর্বনাশা অবস্থার সুযোগ নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপের হোতাগণ বেপরোয়া হয়ে ওঠে।স্বার্থকতা পায় প্রবাদ বাক্য “কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ”! তখন থেকে মাদক ব্যবসার গতি নিয়ণ্ত্রণহীন হয়ে পড়ে।পরিনামে মাদক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আরও ব্যাপকতা লাভ করে। সহজলভ্য হওয়ায় মাদকসেবীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে যায়।মাদক ব্যবসায়ীদের শিকারে পরিণত হয় উঠতি বয়সের তরুণরা।মাদকাসক্ত শ্রেণীর অধিকাংশ সহজ উপায়ে মাদকের টাকা জোগাড় করতে না পেরে জড়িয়ে পড়ছে নানা রকম অপরাধকর্মে। আগে থেকেই অপরাধকর্মে জড়িতদের সাথে নব্য শ্রেণীর যোগদান শুধু সংখ্যাই বৃদ্ধি করছে না,বৃদ্ধি পাচ্ছে নানা ধরনের অপরাধ।আগে মাদক ব্যবসা নিয়ণ্ত্রিত হতো গুটি কয়েক চিহ্নিত ক্ষমতাশালী ব্যক্তির হাতে,ক্ষমতার পালাবদলে তারা গা ঢাকা দিয়েছে, পাশাপাশি পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অসংখ্য মাদক ডন গজিয়ে উঠেছে।নিরীহ এলাকাবাসী কোন রকম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না শিথিল আইন শৃঙ্খলাজনিত কারণে।হাতের মুঠোয় মাদকদ্রব্য চলে আসায় মাদক সেবীর সংখ্যাও আশংকাজনক হারে বেড়ে চলেছে। কিশোর শ্রেণীর বড় একটি অংশ নতুন করে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।তরুণ সমাজের মাদকাসক্ত হয়ে পড়া দেশ ও জাতির জন্য এক অশনিসংকেত।এ সমস্যা সমাধান কল্পে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যবস্হা গ্রহণের কথা বলা হলেও তা কখনই কার্যকর হয়নি,রয়ে গেছে কাগজে কলমে।এর প্রধান কারণ লাভজনক এ ব্যবসায় ক্ষমতাবান ব্যক্তি এবং প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা। তরুণ প্রজন্মের বড় একটি অংশ মাদকের ভয়াল থাবায় নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে ভাবতেই কষ্ট হয়। দীর্ঘ দিনের প্রকট সমস্যা সমূহ রাতারাতি দূর করা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু সমস্যার আশু সমাধান প্রয়োজন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত উন্নত এবং কার্যকর করার পাশাপাশি মাদক নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে। তরুণ সমাজের বড় একটি অংশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার বিকল্প নেই। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন করে গজিয়ে ওঠা মাদক ব্যবসায়ীদের কঠোর হাতে দমন করতে না পারলে জাতির জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ঙ্কর এক পরিনাম। মাদকাসক্ত প্রতিটি ব্যক্তি ভাল মন্দের ফারাক বুঝতে অক্ষম।তারা অসুস্থ,বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিত। মাদক ব্যবসায়ীদের কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তির আওতায় আনা সময়ের দাবি।ইমেজ হারানো পুলিশ বাহিনী মাদক নির্মূলে কার্যকর ভুমিকা পালন করে তাদের হারানো ইমেজ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হলে তা হবে পুলিশ বাহিনীর বড় অর্জন।জাতি পাবে মাদক মুক্ত দেশ।এক্ষেত্রে রাস্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত সরকারের উচিত হবে অগ্রাধিকার মূলক কাজ হিসেবে মাদক নির্মূলকে গুরুত্ব দেয়া এবং একাজে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা।আপামর জনসাধারণের সমর্থন এবং সহযোগিতা মাদক নির্মূলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে প্রশাসনকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।মাদকের ভয়াল থাবায় দেশের প্রায় প্রতিটি অঞলই আক্রান্ত।শিল্প সমৃদ্ধ, ঘন বসতিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ তুলনামূলক বিচারে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলসমূহের অন্যতম।অপরাধ প্রবণতা এবং সণ্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্যও নারায়ণগঞ্জের নাম বারবার সংবাদ মাধ্যমের খোরাক হয়। সণ্ত্রাসী কর্মকান্ডের অন্যতম প্রভাবক মাদক।মাদক নির্মূল করতে পারলে সিংহভাগ অপরাধ কমে আসবে।কতিপয় অর্থ ও ক্ষমতা লিপ্সু দুর্বৃত্তের কারণে সণ্ত্রাস ও মাদকের জনপদে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ।শান্তিপ্রিয় নারায়ণগঞ্জ বাসী এমন কলঙ্ক তিলক থেকে মুক্তি চায়। নারায়ণগঞ্জকে কলঙ্ক মুক্ত করতে প্রয়োজন এলাকাবাসীর সমন্বিত প্রয়াস, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাগত দায়িত্ব পালন এবং জবাবদিহিতা।এমন সন্মিলিত প্রয়াস নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ এগিয়ে আসবেন, নারায়ণগঞ্জ পরিণত হবে প্রকৃত অর্থেই শান্তির জনপদে, তেমন সুদিন কবে আসবে আদৌ আসবে কি? এমন প্রশ্ন শান্তিকামী প্রতিটি নারায়ণগঞ্জ বাসীর।
লেখক: বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি ও পোশাক শিল্পের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...


এ ক্যাটাগরীর আরো খবর..